সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

School income

এই রচনাটি আমি লিখেছিলাম যখন আমি ক্লাশ নাইনে বয়েজ স্কুলে পড়াশোনা করি । উদ্দেশ্য ছিলো রম্য রচনা হিসেবে লেখার । কারণ আমাদের বয়েজ স্কুলে একটি ম্যাগাজিন পাঁচ বৎসর পর পর ছাপানো হতো । দিশারী নামক সেই ম্যাগাজিনে এই লেখাটি দেওয়ার উদ্দেশ্যে লিখেছিলাম । কিন্তু কোনো কারণবশত সেবার মানে সেই বৎসর ম্যাগাজিন ছাপানো হলো না । লেখাটি যে আমার কাছে পরে আছে আমি তাও জানতাম না ! হটাৎ কিছু পুরোনো কাগজপত্র - এর মাঝে এই লেখাটি পাই ! অবাক হয়েছিলাম এতো বছর আগের স্মৃতিও আমার কাছে বিদ্যমান । লেখাটি যেনো আর না হারায় এইজন্য অনলাইন - এ টাইপ করে পোস্ট করে রাখলাম । শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য এটা লেখা , পাঠকগণ আমাকে ভূল বুঝবেন না , এটা পুরোপুরি একটি কাল্পনিক রচনা । মোহাম্মদ আশরাফুল আলম রনি স্কুল ইনকাম “ ' স্কুল ইনকামের নিত্য নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে এরা । নতুন নতুন অভিনব স্টাইল - এ স্কুল ইনকামের কাজ সম্পন্ন করাই এদের কাজ । ' ” বাইরে থেকে এসেই শুনি মেজকাকা এসে হাজির হয়েছে আমাদের বাড়িতে । এটা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় । কারণ মেজকাকা বৎসরে একবার আমাদের বাড়িতে হাজিরা দেন - ই । বাড়িতে ঢুকে দু’গ্লাস পানি খেতে না খেতেই কাকা তার স্বভাব - সুলভ গুরুগম্ভীর গলায় আমাকে ডাক দিলেন । আমি ঘরে ঢুকে সালাম সম্পন্ন করতেই কাকা বলে উঠলেন , " এখন কয়টা বাজে ? এতো দেরিতে বাড়িতে আসার সময় হলো ? মাগরিবের আজান পড়ার সাথে সাথে বাড়িতে ঢুকলিনা কেনো ? " " কাকা মাত্র একঘন্টা দেরী হয়েছে । আমি কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে বলি , আর আজকেই শুধু দেরি হয়েছে । " " তোর মায়ের কাছে শুনলাম তুই প্রতিদিনই দেরী করে বাড়িতে আসিস । আর লেখাপড়া শিকেই তুলে শুধু খেলাধুলা করেই বেড়াচ্ছিস । ইতিমধ্যে নাকি বখাটের খাতায় নাম লেখাতে যাচ্ছিস । " কাকা শান্ত গলায় বললেন । " ডাঁহা মিথ্যা কথা কাকা । " আমি আঁতকে উঠে বলি , " প্রতিদিনই সন্ধ্যার আজানের সময় বাড়ি আসি আর শুধু প্লে টাইমেই প্লে করি মানে কিনা খেলাধুলা করি । " " তা নাহয় করলি ভালো কথা । " কাকা বোঝানোর ভঙ্গিতে বলেন , " কিন্তু লেখাপড়া তো করতে হবে ! " " সে কি কাকা ! আপনি জানেন না প্লে টাইম বাদে শুধু লেখাপড়াই করি । " আমার কথা শুনে কাকা একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন । আমি বলতেই থাকি " সকাল ছয়টায় আম্মা ঘুম থেকে ডেকে তুললে , আগের দিন বন্ধুর কাছ থেকে আনা গল্পের বই পড়ি । আর নাহলেও দিনের মধ্যে দুটা গল্পের বই পড়া শেষ করি । মাসের প্রথমের কিশোর ও রহস্য পত্রিকার কথা বাদই দিলাম । " এক নাগাড়ে ননস্টপ কথা বলে থামি আমি । তখনই কাকা চোখদুটো গোলআলুর মতো করে রাগে ফেটে পরে বলেন , " বাঁদর ! এই বই না ক্লাশের বইয়ের কথা বলছি । আর তোর মুখে মুখে কথা বলার মানে কাউন্টার কথা বলার স্টাইল ত্যাগ করবি মানে কিনা দূর করবি । এখন যা খাতা নিয়ে আয় তোকে ট্রান্সলেশন দেবো , না পারলে তোর কপালে খারাবি আছে । " কাকার সবগুলো বদঅভ্যাসের মধ্যে এটি একটি নাম্বার ওয়ান বদঅভ্যাস । যখন তখন সময় অসময় আমার ওপর ট্রান্সলেশন - এর বিদ্যা জাহির করবেন । কাকার দুই নাম্বার বদঅভ্যাস হচ্ছে উদ্ভট বিষয় নিয়ে রচনা লিখতে দেওয়া । তা যাই হোক মনে মনে রেগে গেলেও কাকাকে খাতা এনে দিলাম । কাকা খাতাতে ট্রান্সলেশন লিখে তা করতে দিয়ে তার বিশেষ স্পিশাল ব্রিটিশ চটি জোড়া পরে বাইরে বেরিয়ে গেলেন গোল্ড লিফ ফোকাতে এবং করা গলায় বলে গেলেন , " ট্রান্সলেশনগুলো করে রাখতে আরো বললেন এটা আমার হুকুম । " ************************************ এই অবসরে কাকার ইতিহাসটা ঝেড়ে ফেলা যাক । কাকা থাকেন আমাদের গ্রামের বাড়িতে । লেখাপড়াতে তিনি খুব একটা ভালো ছিলেন না । তবে ইংরেজী ট্রান্সলেশন - এ খুব ভালো ছিলেন । কাকা খুব মেধাবী ছিলেন কিন্তু পড়ালেখা বিশেষ করতেন না । ট্রান্সলেশন - এ তিনি কি একটা আর্ট খুঁজে পেতেন , তাই এটা ভালোমতো চর্চা করতেন । তিনি কোনোমতে মেট্ৰিক মানে এস . এস . সি . পরীক্ষা এক চান্সেই পাশ করে ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষায় মানে এইচ . এস . সি . পরীক্ষাতে দু ' বার ডিগবাজী মেরে তৃতীয়বারের চেষ্টাতেও পাশ না করে হাট্টিক সম্পন্ন করেন এবং এটা করে যখন তিনি বাড়ি থেকে পালানোর পাঁয়তারা কষছিলেন তখনই তার বড়ভাই অর্থাৎ আমার ফাদার মানে আমার আব্বাজান কাকাকে ব্যাবসায় লাগিয়ে দিলেন । তিনি তাঁর উর্বর মস্তিস্কোর দ্বারা তিন বৎসরের মধ্যে ব্যাবসায় উন্নতি সাধন করে লালে লাল হয়ে গেলেন । তিনি এখনো বিয়ে নামক ব্যাপারটির মধ্যে যাননি । সহসা যাবেন বলেও মনে হয় না । তাঁর মতে বিয়ে করা মানে সযত্নে নিজের হাতে নিজের গলায় ফাঁস পড়ানো । সেই ফাঁসের সুতোর আরেক মাথা থাকে বউ - এর নিকট বা কাছে । বউ - এর যখন স্বামীকে বাড়িতে আনার ইচ্ছা হয় , তখন সুতো গুটাতে শুরু করে এবং বাধ্যক্রমে স্বামীকে বাড়ি আসতে হয় । কাকা প্রায় প্রতি বছরই একবার করে আমাদের বাড়িতে হাজিরা দেন এবং মাসখানেক থাকেন । মনে হয় তিনি একঘেয়েমি কাটানোর জন্যই এটা করেন । তবে এই একমাস কাকা থাকার দরুন আমার জানের উপর খুব জাকামদানী চলে । কারণ আমার এই কাকাটা একেবারে জিলিপির মতো সোজা তো । কাকার পোশাক - আশাক খুব সাধারণ । প্রায় সবসময়ই লুঙ্গি ও শার্ট পড়তেন । তবে কোথাও বেড়াতে গেলে পায়ে প্যান্ট চাপাতেন । তবে তাঁর স্পেশাল ব্রিটিশ চটি জোড়া ছিলো তার নিত্যসঙ্গী । যেখানেই জাননা কেনো তিনি তার চটি জোড়া হাতছাড়া করতেন না । আমার জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে কাকাকে ওই চটি জোড়া ছাড়া অন্য কোনো জুতা বা স্যান্ডেল পড়তে দেখেছি বলে মনে পরে না । চটিটাতে এতো পট্টি আছে যে গুনবার যো নেই ! আর কতবার এর সোল পাল্টেছেন মানে বদলিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই । এই কারণে আমি এই চটিজোড়াকে বিশেষ স্পেশাল ব্রিটিশ চটি বলি ! কাকা খাওয়া - দাওয়ার ব্যাপারে খুব মানে যথেষ্ট সচেতন । তার খাওয়া - দাওয়া ছিলো নিয়মমাফিক । সপ্তাহে তিনদিন আমিষ , তিনদিন নিরামিষ ও একদিন উপোস নামক কাজটি করতেন শশীরের মেদ কমাতে । ************************************ কাকা বাইরে থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে আমাকে করতে দেওয়া ট্রান্সলেশনগুলো দেখতে চাইলেন । খাতা এনে দিলে ট্রান্সলেশনগুলো দেখে গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন , " একটা করেছিস আর বাকিগুলি করিসনি কেনো ? " " পারিনি বাকিগুলি । " আমার সোজাসাপ্টা জবাব । " এই সোজা ট্রান্সলেশনগুলি পারিসনি । তোর নাইনে না পড়ে ওয়ানে পড়া উচিত ছিলো । " আফসোস করে বললেন কাকা । " কাকা , ওয়ানে ট্রান্সলেশনই নেই । " আমি তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলাম । " ওয়ানে পড়লে ট্রান্সলেশন করাই লাগতো না । " " বেয়াদপ ! " কাকা গর্জে উঠলেন । " এমনিতে তো পারিসনি আবার আমার মুখে মুখে কথা । " আমি গোবেচারার মতো মুখভঙ্গি করে বললাম , " কি করবো । শুধু এই একটাই বইতে খুঁজে পেলাম , বাকিগুলো পেলাম না । " বলেই বুঝলাম ভূল হয়ে গেছে । কিন্তু ততক্ষণে কাকা তার হাতের সুখ আমার পিঠে মেটাতে শুরু করেছেন !!! ************************************ পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলাম একটু দেরীতে । নাস্তা সেরে মনে মনে চুপিসারে বাইরে পালাবার পরিকল্পনা করছি , তখনই কাকা ডাকলেন । কাকার উপর খুব বিরক্ত বোধ করলাম । তবু বাধ্য ছেলের মতো তার কাছে যেতেই জিজ্ঞাসা করলেন , " তুই তো সাত বৎসর ধরে স্কুলে পড়ছিস । স্কুল সম্পর্কে তাহলে তোর ভালো অভিজ্ঞতা থাকার কথা । " " তা অভিজ্ঞতা ভালোই আছে । " এক ঘন্টার মধ্যে স্কুল সম্পর্কে তোর অভিজ্ঞতার আলোকে একটি রচনা লিখে ফেলতো । " আমি খুশিতে বাগ বাগ হয়ে রচনা লিখতে বসে গেলাম । আধাঘণ্টার মধ্যে রচনাটি লিখে ফেললাম এবং কাকার কাছে হাজির হলাম । তিনি আমাকে বাগানে দুটো মোড়া নিয়ে যেতে বললেন । বাগানে মোড়া নিয়ে যাওয়ার পর কাকা এসে আয়েশী ভঙ্গিতে দুটি ঢেঁকুর তুলে আমাকেই রচনাটি পড়ে শোনাতে বললেন । আমি পড়ার জন্য মুখিয়েই ছিলাম । কাকার অনুমতি পেয়ে পড়া শুরু করি । “”” আগেকার ছেলেরা স্কুলে যেতো পড়ালেখার উদ্দেশ্যে । তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এখনকার ছেলেরা স্কুলে যায় বিনোদন করতে বা সোজা কথাই অথবা স্ট্রেইট বাংলায় বলা যায় আড্ডা মারতে । আনন্দ করাই থাকে কিছু ছাত্রের মূল উদ্দেশ্য । কিছু বাতিকক্রম গাধাগুলো বাদে । এই বাতিকক্রম গাধাগুলো স্কুলে যায় পড়ালেখা করার উদ্দেশেই । তবে যারা আনন্দ করার উদ্দেশ্যে স্কুলে যায় তাদের বাধাদান করার জন্য স্কুলে থাকে আজব প্রাণী শিক্ষক । স্কুল নামের এই বিচিত্র স্থানটিতে কয়েক প্রকারের প্রাণী বিদ্যমান । তবে প্রধান দুই প্রাণী হচ্ছে এক ছাত্র ও দুই শিক্ষক । এছাড়া উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে টিফিন বেয়ারার , দপ্তরি , ঝাড়ুদার , ক্লার্ক , ও লাইব্রেরিয়ান । শিক্ষক নামের এই আজব প্রাণীটিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্টের ভিত্তিতে । এক ধরণের শিক্ষক খুব কড়া ও রাগী । ছাত্ররা যদি পড়া না পারে বা বেয়াদবি করে তবে ইনারা তাদের কঠিন শাস্তি দিতে পছন্দ করেন । ছাত্ররা এই ধরণের শিক্ষকদের পছন্দ অথবা ভক্তি না করলেও খুব ভয় করে । তবে কিছু বখাটে ছাত্র এই ধরণের শিক্ষককে চাকু বা ছুরি নিয়ে তাড়া করে ক্লাশে অতিরিক্ত মারা বা বেশী শাস্তি দেওয়ার কারণে । এই ধরণের ছাত্রদের কোনো শিক্ষকই কিছু বলে না । এই জাতীয় শিক্ষকদের বয়স সাধারণত পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ - এর মধ্যবর্তী হয়ে থাকে । পরীক্ষা হল - এ কোনো ছাত্রের নকল ধরতে পারলে এক্সফেল করা এদের অন্যতম বদঅভ্যাস । এরা নকল ধরতেও খুব পটু হয়ে থাকে । আরেক ধরণের শিক্ষক শান্ত ও অরাগী । এদের ক্লাশে পড়া না পারলেও ছাত্রদের ইনারা সেরকম শাস্তি দেন না । পাঁচবার কান ধরে উঠবস অথবা নীলডাউনই এদের শাস্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ । বেত দিয়ে মারা এ জাতীয় শিক্ষকদের কল্পনার মধ্যেও আসে না । এদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ক্লাশে এসে চেয়ার - এ বসে ছাত্রদের কিছু পড়তে বলে ঝিমানো , এই অবসরে ছাত্ররা পড়ার পাট চুকিয়ে গল্প করা বা খাতায় কাটাকুটি খেলা শুরু করে । ছাত্রদের কথা শিক্ষক - এর ঝিমানিতে ব্যাঘাত ঘটালে শিক্ষকের এক ধমকে ক্লাশ শান্ত হয়ে যায় । তখন শিক্ষক আবার ঝিমানিতে মন দেয় এবং ঝিমাতে শুরু করলে ছাত্রদের খেলা ও গল্প যথাপূর্বক চলতে থাকে । এই ধরণের শিক্ষক এইজন্যই ছাত্রদের পছন্দের বস্তূ । এরা নকল ধরতে খুব একটা পারদর্শী নয় অথবা দেখলে না দেখার ভান করে । তবে কদাচিৎ কখনও ধরলেও ....................... stop it , ......... কাকা হুংকার ছেড়ে নিতান্ত বেরসিকের মতো বাঁধা দিলেন । " কি ফালতু কথা লিখেছিস । শিক্ষক নিয়ে গবেষণা । " কাকার গলায় স্পষ্ট রাগের আভাস । সুতরাং আমি চট করে শিক্ষক চাপ্টার বাদ দিয়ে পড়া শুরু করি । এবার আসা যাক স্কুলের আরেক প্রাণী ছাত্রের কথায় । ছাত্র নামের এই প্রাণীদেরও কোয়ালিটি তিন ভাগে বিভক্ত । কিছু ছাত্র থাকে লেখাপড়ায় ভালো ও ভদ্র । এরা দিনে মিনিমাম চার থেকে পাঁচ ঘন্টা লেখাপড়া করে । এদের রেজাল্টও ভালো হয় । এদের রোল নাম্বার সাধারণত এক থেকে বারোর মধ্যেই থাকে । শিক্ষকগণ এদের খুব ভালোবাসে ও পছন্দ করে । কারও সাথে বা সঙ্গে এদের ঝগড়া - বিবাদ হলে শিক্ষকেরা এদের পক্ষই নেন । তবে এরা কখনো কারও সাথে বা সঙ্গে ঝগড়া - বিবাদ করে না । আর কিছু ছাত্র আছে যাদের সোজা ভদ্র বাংলায় বলা যায় বখাটে । এরা লেখাপড়া করে না , পরীক্ষায় নকল করে পাশ করে । তবে এদের ফাইট নামে বস্তুটি খুব পছন্দ । এদের মধ্যে মারামারির গল্পই বেশী চলে । গতকাল কাকে মারা হয়েছে , আজ কাকে মারা হবে ও আগামীকাল কার কপালে খারাবি আছে , এসব এদের গল্পের বিষয়বস্তু । এরা স্কুল হতেই ফাইট তথা মারামারির পি . এইচ . ডি . নামক ডিগ্রিটি লাভ করে । গায়ে পরে মারামারি লাগাতে এরা ওস্তাদ । এদের সিগারেটের অভ্যাস থাকে সাধারণত । পড়া না পারলেও শিক্ষকগণ এদের মারে না । এর কারণ হচ্ছে দুটি , মার খেয়ে খেয়ে এদের চামড়া গন্ডারের মতো শক্ত হয়ে গেছে । যার দরুন এরা নীরবে ছোটখাটো মার সহ্যের ক্ষমতা রাখে । আর আরেকটি কারণ হচ্ছে মার খেয়ে শিক্ষকদের ( মানে যে শিক্ষক এদের মারে ) হেসে , চাপাটি , ছুরি অথবা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিক্ষককে তাড়া করার রেকর্ডও আছে এদের । সুতরাং শিক্ষকগণ এদের ঘাটাতে সাহস পান না । এরা স্কুল ঠিক মতো করে না । তবে বাড়িতে বলে প্রতিদিন স্কুল যায় স্কুল ইনকাম - এর ব্যাপারটি সারতে । এদের কাছে স্কুল যাওয়া মানেই ইনকাম । ভদ্র বাংলায় যাকে বলা যায় স্কুলে কাম ইন , পকেটে ইনকাম । স্কুল বন্দ হলে এদের ইনকাম বন্দ হয়ে যায় । তখন এরা একটি লাইন গান হিসেবে বলতে খুব ভালোবাসে বা পছন্দ করে । " পকেটের যাচ্ছে খরা কিছু টাকা পয়সা দাও । " এদের স্কুল ইনকাম সারার বিভিন্ন স্টাইল আছে । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে : বাড়িতে বাবার কাছে স্কুল যাওয়ার রিকশা ভাড়া নিয়ে বন্ধুর সাইকেলে লিফট নিয়ে রিকশা ভাড়ার টাকা বাঁচানো । এটা তার স্কুল ইনকাম - এর মধ্যে গণ্য হয় । নাহলে সিগারেট কেনার টাকা আসবে কোথা থেকে । এছাড়া হরহামেশা স্কুলে চাঁদা দিতে হবে বলে টাকা নেওয়ার ব্যাপার তো আছেই । তাছাড়াও স্কুল ইনকাম - এর নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে এরা । নতুন নতুন অভিনব স্টাইল - এ স্কুল ইনকাম - এর কাজ সম্পন্ন করাই এদের প্রধান কাজ । আর স্কুলের বেতনের টাকা হাতে পেলে তো কোনো কথাই নেই , স্কুল না গিয়ে কোথাও থেকে টাকাগুলি উড়িয়ে স্কুল ছুটির সময় বাড়ি এসে হাজির হয় । এজন্য এদের স্কুলের বেতন অলটাইম বাকী পরে থাকে । কোনো পরীক্ষার শুরুর আগে পরিশোধ হয় । বাবা - মাকে ফাঁকি দিতেও এরা খুব ওস্তাদ হয় , বলা যায় রীতিমতো এক্সপার্ট । কোনো ক্লাশ করে না , শুধু প্রথম ক্লাশ করে নাম পেজেন্ট করার জন্য । যেনো বাবা বা মা স্কুলে উপস্থিতির হিসাব দেখতে গেলে নিরাশ হয়ে তাদের ফিরতে না হয় । প্রথম ক্লাশ শেষে এরা হয়তো বাইরে এসে ঘোরাফেরা করে বা পার্ক অথবা স্কুলের ছাদের কোনো পানি ছাড়া ফাঁকা ট্যাংকির ভিতর বসে থেকে কার্ড গেম খেলে । পার্কে যেতে এরা খুউব পছন্দ করে এবং যায়ও খুব বেশী । এদের স্কুলের আশেপাশে পাওয়া দুস্কর । তবে এদের পার্কে ......... ……………. কাকা আর সহ্য করতে পারলেন না । প্রচন্ড রাগে ফেটে পরে হারামজাদা বলে চিৎকার করে তেড়ে আসলেন । কাকার অগ্নিমূর্তি দেখে আমি হাত থেকে রচনার খাতাটি ফেলে """ চাচা আপন জান বাঁচা """ পন্থাটি অবলম্বন করে পেছনের প্রাচীর টপকে বিশ্ব রেকর্ড করা স্পীডে ঝেড়ে ভোঁ দোর লাগাই । ************************************ সমাপ্ত বিশেষ দস্ত্রব্য : কোনো ছাত্র , শিক্ষক , বা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিদ্রুপ অথবা উপহাস করার উদ্দেশ্যে এই রচনাটি লেখা হয় নাই । শুধুমাত্র পাঠকদের আনন্দদানের উদ্দেশ্যই এই রচনাটি লেখা হয়েছে । আমি রম্য রচনা হিসেবে লেখার চেষ্টা করেছি , জানিনা কতখানি সফল বা বিফল হয়েছি । ধন্যবাদ রচনাটি পড়ার জন্য ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন